আপনি কি জানেন? এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে যা শত শত কিলোমিটার দূরের টার্গেটে আঘাত হানতে পারে কোনও শব্দ ছাড়াই? হ্যাঁ, সেটিই হলো Tomahawk Cruise Missile…মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এক ভয়ংকর অস্ত্র, যা আধুনিক যুদ্ধের রূপটাই পাল্টে দিয়েছে।
![]() |
| Click for Video |
একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যা শত শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, তাও আবার মাটির মাত্র কয়েক মিটার উপরে উড়ে! এই ক্ষেপণাস্ত্রের নাম-টমাহক। শব্দটি শুনলেই মনে হয়, যেন এক ভয়ংকর যোদ্ধার অস্ত্র। আর বাস্তবেও সেটিই-এক আধুনিক যুদ্ধের “নীরব হত্যাকারী”। “Tomahawk - the silent storm from the sea.”
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র (Tomahawk Cruise Missile) হলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এক ধরণের দূরপাল্লার ক্রুজ মিসাইল, যা মূলত ভূমি থেকে বা জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা হয়। এটি এমনভাবে তৈরি করা, যেন তা নিম্ন উচ্চতায় উড়ে, শত্রুর রাডার এড়িয়ে গোপনে প্রবেশ করে টার্গেটে ভয়ংকর নির্ভুলতায় আঘাত হানতে পারে।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপত্তি ১৯৭০-এর দশকে। রেথিওন (Raytheon) কোম্পানি এটি তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর জন্য। ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো এটি ব্যবহৃত হয়। তখন থেকেই টমাহক হয়ে ওঠে মার্কিন সামরিক শক্তির এক অন্যতম ভরসা। গালফ যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, সিরিয়া এবং আফগানিস্তান- প্রায় সব বড় সামরিক অভিযানে এর ব্যবহার দেখা গেছে। একটি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন প্রায় ১,৫০০ কিলোগ্রাম, আর এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ৮৮০ কিলোমিটার। এটি সাধারণত ১,৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে টার্গেটে আঘাত হানতে পারে। মিসাইলটি জিপিএস ও ইনফ্রারেড গাইডেন্স সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার ফলে এটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- এটি শত্রুর রাডারে ধরা পড়ে না সহজে। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা হয়। নিক্ষেপের পর এটি নিজের গাইডেন্স সিস্টেম অনুযায়ী পথ ঠিক করে নেয় এবং মাটির কাছাকাছি উড়ে শত্রুপক্ষের এলাকায় প্রবেশ করে। টার্গেটের কাছে পৌঁছে এটি বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ ধ্বংস সৃষ্টি করে। বর্তমানে টমাহকের নতুন সংস্করণ ’Block V Tomahawk’ আরও উন্নত। এতে রয়েছে নতুন ন্যাভিগেশন সিস্টেম, আপডেটেড সফটওয়্যার, এমনকি মাঝপথে টার্গেট পরিবর্তনের ক্ষমতাও। এখন এটি শুধু ভূমি নয়, শত্রুর জাহাজ ধ্বংস করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র শুধু এক টুকরো প্রযুক্তি নয়, এটি এক দেশের সামরিক ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা আর আধিপত্যের প্রতীক। একটি ছোট্ট মিসাইল, কিন্তু তার প্রভাব পুরো যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম!

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন