তুরস্কের ভূতুড়ে শহর কায়াকয় | Kayaköy – The Abandoned City in Turkey - BD Today Viral

এইমাত্র

Post Top Ad

Post Top Ad

২৩ অক্টোবর ২০২৫

তুরস্কের ভূতুড়ে শহর কায়াকয় | Kayaköy – The Abandoned City in Turkey

তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমের মুগলা প্রদেশে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় শহর- কায়াকয় (Kayaköy) । একসময় এটি ছিল প্রাণবন্ত গ্রিক বসতি, কিন্তু এখন সেখানে নেই কোনো মানুষ, শুধু নিঃশব্দ ইতিহাসের সাক্ষ্য। জানুন কেন শত বছর ধরে এই শহরে কেউ থাকে না, কীভাবে এটি পরিণত হলো এক “Ghost Town” -এ, আর কী গল্প লুকিয়ে আছে এর ধ্বংসপ্রাপ্ত চার্চ, ঘর আর পাহাড়ের কোণে।

kayakoy-turkey


পাহাড়ের ঢালে ছড়িয়ে আছে শত শত পাথরের ঘর, কিন্তু সব ঘরই ফাঁকা…না কোনো মানুষের হাসির শব্দ, না কোনো বাজারের কোলাহল। শুধু বাতাসের হাহাকার আর ধ্বংসস্তূপের নিঃশব্দ ইতিহাস। এটাই তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কায়াকয়, একটি শহর যেখানে গত একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কেউ বসবাস করে না! কায়াকয় (Kayaköy) তুরস্কের মুগলা প্রদেশে, ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের কাছে অবস্থিত। এক সময় এই শহরের নাম ছিল লেভিসি (Levissi) , এবং এটি ছিল এক প্রাণবন্ত গ্রিক বসতি। ১৮ শতক থেকে ২০ শতকের শুরু পর্যন্ত এখানে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পরিবার বাস করত। চার্চ, স্কুল, দোকান, এমনকি ছোট বাজারও ছিল এখানে। কায়াকয়ের মানুষরা কৃষি ও বাণিজ্যে নিযুক্ত ছিল.. তাদের জীবন ছিল শান্ত, সংস্কৃতিতে ভরপুর, আর প্রতিবেশীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কপূর্ণ।


কিন্তু সবকিছু বদলে যায় ১৯২৩ সালে, যখন তুরস্ক ও গ্রীসের মধ্যে ঘটে এক বিশাল জনবিনিময় চুক্তি। যাকে বলা হয় Population Exchange between Greece and Turkey। এই চুক্তির ফলে মুসলিম তুর্কিরা গ্রীস থেকে তুরস্কে ফিরে আসে, আর খ্রিস্টান গ্রিকরা তুরস্ক থেকে গ্রীসে চলে যায়। ফলে কায়াকয়ের হাজারো গ্রিক বাসিন্দা বাধ্য হয়ে তাদের প্রিয় ঘর, স্মৃতি, ও জীবন ফেলে চলে যায় গ্রীসে। তাদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল তুর্কি মুসলমান শরণার্থীদের। কিন্তু কঠিন জীবনযাপন, পাহাড়ি ভূমি আর পানির অভাবে তারা এখানে স্থায়ী হতে পারেনি। এভাবেই একসময়ের প্রাণবন্ত শহর ধীরে ধীরে পরিণত হয় “ভূতুড়ে শহর”এ।


আজও কায়াকয়ের পাহাড়ে দেখা যায় প্রায় ৫০০টিরও বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি, দুটি বড় চার্চ। যেগুলোর দেয়াল ভেঙে পড়লেও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। এই শহর এখন একটি ওপেন-এয়ার মিউজিয়াম। যেখানে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক আসে নিস্তব্ধতার এই সৌন্দর্য দেখতে। সূর্যাস্তের সময় যখন আলো পড়ে ভাঙা বাড়িগুলোর জানালায়, তখন মনে হয় - শহরটা যেন আবার জীবন্ত হয়ে উঠছে। যেন বাতাসে এখনো ভেসে বেড়ায় অতীতের মানুষের ফিসফিসানি।


কায়াকয় শুধু একটি জনশূন্য শহর নয়, এটি ইতিহাসের এক নিঃশব্দ সাক্ষী। মানুষের ধর্ম, রাজনীতি আর যুদ্ধ কীভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মের জীবন বদলে দিতে পারে তার প্রমাণ। আজও যখন আপনি কায়াকয়ের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়াবেন, শুনতে পাবেন সময়ের এক অদ্ভুত প্রতিধ্বনি- যা মনে করিয়ে দেবে, প্রতিটি পরিত্যক্ত ঘর একেকটি গল্প বলে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

Post Top Ad

bd today viral bdtodayviral All Right Reseved