![]() |
| Click For Video |
আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো, কে ছিলেন এই লেডি ডাই? কিভাবে তিনি মৃত্যুর পরও এত অক্ষত রইলেন? এবং তাঁর কবর থেকে ইতিহাসের কোন কোন রহস্য উন্মোচিত হলো?
লেডি ডাই, যাঁর পুরো নাম Xin Zhui (জীন ঝুই), তিনি ছিলেন দাই মারকুইস লি চ্যাং-এর স্ত্রী। তিনি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে, হ্যান সাম্রাজ্যের সময়কার মানুষ। তখন চীন ছিল উন্নতির চূড়ান্ত পর্যায়ে, সম্রাট ও অভিজাতদের জীবন ছিল বিলাসবহুল আর রাজনৈতিকভাবে ছিল নানা ষড়যন্ত্রে ভরা।
লেডি ডাইকে ইতিহাসে বলা হয় “চীনের সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত মমি”। কিন্তু মমি বললে হয়তো ভুল হবে, কারণ তিনি মিশরের মমির মতো শুকনো নন। বরং তাঁর দেহ এখনো নরম, ত্বক ইলাস্টিক এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভাঁজ করা সম্ভব।
ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, লেডি ডাই প্রায় ৫০ বছর বয়সে মারা যান। গবেষণায় জানা যায় তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। প্রচুর মিষ্টি খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার কারণে তাঁর ওজন বেড়ে গিয়েছিল। তাঁর ফুসফুস ও হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগতেন এবং হার্ট অ্যাটাকেই তাঁর মৃত্যু হয়।অর্থাৎ, প্রায় ২২০০ বছর আগে এক ধনী নারীর মৃত্যু হয়েছিল আধুনিক যুগের সবচেয়ে প্রচলিত রোগে– হার্ট অ্যাটাক!
১৯৭১ সালে চীনের হুনান প্রদেশের মাওওয়াংদুই অঞ্চলে একটি টিলা খননের সময় লেডি ডাইয়ের সমাধি আবিষ্কৃত হয়। আসলে এটি ছিল বিশাল এক কবরস্থান যেখানে একাধিক কবর ছিল। খননকাজের সময় archaeologists এমন কিছু আবিষ্কার করেন যা ইতিহাসে বিরল।তাঁর সমাধির ভেতর ছিল– চার স্তরের কফিন, শত শত বিলাসবহুল জিনিসপত্র, রেশমের পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, খাবার ও পানীয়, এমনকি চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত নানা ভেষজ..
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ছিল, তাঁর দেহ এক ধরনের রহস্যময় তরলে ডুবে রাখা হয়েছিল, যা এখনো বিজ্ঞানীদের কৌতূহলের বিষয়।
লেডি ডাইয়ের দেহ আজও এত ভালোভাবে সংরক্ষিত কেন?
গবেষকরা কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন –
.বায়ুরোধী সমাধি : তাঁর কফিনগুলো একটির পর একটি স্তরে সিল করা ছিল, যাতে বাইরে থেকে কোনো বাতাস প্রবেশ করতে না পারে।
.রহস্যময় তরল : দেহ সংরক্ষণের জন্য কফিনে ভরা ছিল এক ধরনের তরল। বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি হয়তো ভেষজ ও খনিজ পদার্থের বিশেষ মিশ্রণ।
.নিম্ন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ : সমাধিটি এমনভাবে নির্মিত ছিল যে ভেতরের পরিবেশ স্থায়ীভাবে ঠান্ডা ও আর্দ্র থাকত।
.প্রাচীন চীনা কৌশল : ধারণা করা হয়, তখনকার চিকিৎসক ও জ্যোতির্বিদরা দেহ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ রাসায়নিক ব্যবহার করতেন। এই কারণেই মৃত্যুর দুই সহস্রাব্দ পরও তাঁর দেহ অক্ষত রয়ে গেছে।
লেডি ডাইয়ের দেহ পরীক্ষার মাধ্যমে ইতিহাসবিদরা হ্যান সাম্রাজ্যের সময়কার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছেন।তাঁর পেটের ভেতর এখনো তরমুজের বীজ পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে মৃত্যুর অল্প সময় আগে তিনি ফল খেয়েছিলেন।তাঁর হাড় ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করে জানা গেছে, অভিজাত জীবনযাপনের কারণে তিনি শারীরিকভাবে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না।তাঁর পোশাক, কফিন ও সমাধির ভেতরের জিনিসগুলো থেকে জানা যায় তখনকার ফ্যাশন, সঙ্গীত, চিকিৎসা ও আচার-অনুষ্ঠান কেমন ছিল।
কেন তাঁকে “লেডি ডাই” বলা হয়?
যখন তাঁর সমাধি আবিষ্কৃত হয়, তখন তাঁকে “মারকুইস অফ দাইয়ের স্ত্রী” বলা হয়েছিল। সেই থেকেই নাম হয় “লেডি ডাই”। আজও ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাচীন মমি বা preserved body হিসেবে পরিচিত।
লেডি ডাই শুধু একজন অভিজাত নারী নন, তিনি ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। তাঁর দেহ আজও গবেষকদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর মৃত্যু, তাঁর জীবনধারা, এমনকি তাঁর কবর – সবকিছুই আমাদের জানায় ২২০০ বছর আগের চীনা সভ্যতা কতটা উন্নত ছিল।
লেডি ডাই, এমন এক নাম, যিনি মৃত্যুর দুই সহস্রাব্দ পরেও জীবন্ত ইতিহাস হয়ে আছেন। তাঁর দেহ আজও বিজ্ঞানীদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, আসলে কত উন্নত ছিল প্রাচীন চীনা চিকিৎসা ও বিজ্ঞান?
আর আমরা? আমরা শুধু বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি, যখন দেখি, সময়ের কঠিন পরীক্ষাকেও হার মানাতে পারে মানুষের জ্ঞান আর কৌশল।

osadharn.
উত্তরমুছুন