ভারত ও আফগানিস্তান (India Afghanistan) দুটি দেশ যাদের সম্পর্কের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, রাজনীতি আর কৌশলগত স্বার্থের জটিল খেলা।
![]() |
| Click For Video |
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে দুটি দেশের নাম বারবার সামনে আসে - ভারত ও আফগানিস্তান। এদের সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বের নয়, বরং কৌশল, অর্থনীতি, নিরাপত্তা আর প্রভাবের এক জটিল সমীকরণ। তালেবানরা ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের পতন হয়। ভারত তখন দূতাবাস বন্ধের পাশাপাশি তড়িঘড়ি করে কূটনীতিক ও নাগরিকদের সরিয়ে নেয়। তবে গত চার বছরে গঙ্গার জল প্রবাহের মতো পরিস্থিতিও বদলে গেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবিলা করতে ভারত বাস্তববাদী নীতির অংশ হিসেবে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। অপরদিকে সীমান্তে সংঘাতের কারণে তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে।তালেবান নেতাদের আতিথেয়তা জানানো মানে; ভারত তাদের প্রশাসনকে বৈধতা দিচ্ছে এবং কার্যত স্বীকৃতি দিচ্ছে।এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো -ভারত এখন কেন তালেবানকে স্বাগত জানাচ্ছে? ভারত ও আফগানিস্তান তাহলে এত ঘনিষ্ঠ হলো কেন? আর এই সম্পর্কের পেছনে কার কী স্বার্থ লুকিয়ে আছে?
ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক নতুন নয়। হাজার বছরের পুরনো বাণিজ্য পথ - “সিল্ক রোড”- এর সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক যোগসূত্র গড়ে ওঠে। মুঘল সাম্রাজ্যের সময় আফগান যোদ্ধারা ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতার পরও ভারত আফগানিস্তানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে উঠে আসে। ভারতের দৃষ্টিতে আফগানিস্তান শুধু একটি প্রতিবেশী নয়, বরং মধ্য এশিয়ার প্রবেশদ্বার। পাকিস্তানের পাশে থাকা আফগানিস্তানে প্রভাব বজায় রাখা মানে, ইসলামাবাদের কৌশলগত পরিসর সীমিত রাখা।ভারত আফগানিস্তানে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, হাসপাতাল, সড়ক নির্মাণে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। “দেলরাম-জারাঞ্জ হাইওয়ে” বা “আফগান পার্লামেন্ট বিল্ডিং”- এগুলো ভারতের সহায়তায় তৈরি। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক দায়িত্বশীল শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের জন্য ভারত হলো এক বিশ্বাসযোগ্য সহযোগী। আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার পর যখন দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়ে, তখনও ভারত মানবিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখে।তালেবান সরকারের সঙ্গেও ভারত সীমিত যোগাযোগ বজায় রাখছে-মূলত স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধের স্বার্থে।তবে এই সম্পর্কের আরেকটি দিক আছে-পাকিস্তানের উদ্বেগ। ইসলামাবাদ আশঙ্কা করে, ভারতের প্রভাব আফগানিস্তানে বেড়ে গেলে, তার “পশ্চিম সীমান্তে”ও ভারতীয় প্রভাব বলয় তৈরি হবে। তাই পাকিস্তান চায় আফগানিস্তান তার কৌশলগত মিত্র হয়ে থাকুক, আর ভারতকে দূরে রাখুক।অন্যদিকে, চীনও “বেল্ট অ্যান্ড রোড” উদ্যোগের মাধ্যমে আফগানিস্তানে প্রবেশের চেষ্টা করছে, যা ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।সব মিলিয়ে, ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্ব নয়-এটা এক জটিল ভূ-রাজনৈতিক খেলায় পারস্পরিক প্রয়োজনের ফল। ভারত চায় মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের পথ খুলে দিতে, আর আফগানিস্তান চায় উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।এই সহযোগিতা কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর বৃহৎ শক্তিগুলোর অবস্থানের ওপর।
আপনার মতে – ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক কি সত্যিকারের বন্ধুত্ব, নাকি কৌশলগত স্বার্থের খেলা? কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

nice
উত্তরমুছুন